ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে তা হবে সকলের ব্যর্থতা: আলী রীয়াজ

0

জাতীয় | 15th July, 2025 2:25 pm


‎ঐকমত্য কমিশন কোনো আলাদা সত্তা নয়। তাই কমিশন ব্যর্থ হলে, তা হবে সকলের ব্যর্থতা। যা হবার সুযোগ নেই। একথা বলেছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

‎মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৪তম দিনের সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

‎অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, কমিশন গঠিত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে কমিশন। তাই সকলে মিলে সফল হতেই হবে।

‎তিনি বলেন, এই সাফল্যের মাপকাঠী হচ্ছে, সকলে মিলে আমরা একমত হতে পারছি কিনা। কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারছি কিনা।

‎কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। কিছু বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনাতেই সবাই সম্মতি জানিয়েছেন। আর কিছু নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় আছে, যেগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এসব বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


‎তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে যেন আমরা আমাদের দায় এবং দায়িত্ব অনুভব করি। আমরা যেন মনে রাখি, কীভাবে আমরা এ জায়গায় এসে উপস্থিত হতে পেরেছি। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কী প্রত্যাশা মানুষের। তা প্রত্যাশা পূরণে আমরা কে কী ভূমিকা পালন করবো।

‎প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও উপস্থিত আছেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. আইয়ুব মিয়া

ছাত্র-জনতার জাগরণে স্বৈরাচারের পতন: ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট আজ ‎‎জাতীয় | 5th August, 2025 10:53 am‎‎আজ ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। ঠিক এক বছর আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে পতন হয় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার। সরকার প্রধানসহ, সংসদ সদস্য, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিবও পালিয়ে যায় আন্দোলনের ব্যাপকতায়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলের এমন পরাজয় বিরল। ৩৬ দিনের টানা আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও’।‎বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচি পরিণত হয় ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে। সরকারবিহীন এক জাতির দায়িত্ব নেন সেনাপ্রধান। জানান, বিচার হবে সকল হত্যাকাণ্ডের।‎‎কেমন ছিলো সেদিনের ৫ আগস্ট! সকাল থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো রাজধানী ঢাকায়। দুপুর ১১ টার পর বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। দুপুর গড়াতে এই ঢ্ল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শুধু বাংলার ছাত্র আর রাজনীতিবীদেই সীমিত নয়, সমুদ্রের প্রতিটি বিন্দুর মত লং মার্চ টু ঢাকা বাস্তবায়নে যোগ দেন মায়েরা-যারা এতদিন সন্তানের নিরাপত্তার জন্য পথ আগলে রেখেছিলেন, বাবারা-যারা শাসন করে সন্তানকে ঘরে ফিরতে বলেছিলেন, শহীদদের পরিবার, আত্মীয়, পরিচিত এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ। ছিলেন নিরীহ ছাপোষা চাকুরীজীবিরা-যারা চাকুরী হারানোর ভয়ে মুখে তালা দিয়েছিলেন যোগ দিয়েছিলেন তারাও। শুধু ছাত্রই নয়, তাদের সাথে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।‎‎এমন পরিস্থিতিতে গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যায় প্রবল পরাক্রমশালী তৎকালীন সরকারপ্রধান, যিনি উদ্ধত কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন ‘শেখ হাসিনা পালায় না’। বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে বিমান বাহিনীর এমআই‑১৭ হেলিকপ্টারে প্রথমে গণভবন থেকে তখনকার বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে। পরে সেখান থেকে সি১৩০ জুলিয়েট হারকিউলিসে করে স্বজনসহ পালিয়ে যান ভারতের গাজিয়াবাদের হিন্দোন বিমান ঘাটিতে।‎এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর আসে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে শেখ হাসিনা। পতন হয়েছে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী সরকার ব্যবস্থার। কিন্তু পরিস্কার কোনো ঘোষণা নেই। ২টায় সেনাপ্রধানের ভাষণ। সবার চোখ ছিল মোবাইল বা টিভিতে। তখনকার বাস্তবতায় বিশেষ করে বললে যমুনা টেলিভিশনে। ১ ঘণ্টা বিলম্বে বেলা ৩ টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেষা ভাষনে সেনাপ্রধান নিশ্চিত করেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা।‎‎তখনই বিজয় উল্লাসে নামে পুরো জাতি। ছাত্র-জনতার জনসমুদ্র ততক্ষণে গণভবনে পৌঁছে যায় বিজয় মিছিল নিয়ে। গণভবনের প্রতিটি কোনায় তখন বাংলার মানুষের উপস্থিতি। পাশের লেকে নেমে গোসল করে হাজার হাজার মানুষ। সকলের মধ্যে তখন বিরাজ করছিল অদম্য-বুনো উল্লাস। আবেগ–আপ্লুত হয়ে কেউ কেউ কান্নাও করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কেউ আবার আদায় করেন নামাজ। শুধু গণভবন নয়, সংসদ ভবনেও বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার আনন্দেই যেন এমন উল্লাস-আনন্দ-আর হাসিমুখ।‎প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ মানুষ। বৈঠক রুম, দরবার হলসহ প্রতিটি কক্ষে মানুষ প্রবেশ করে। এসময় তারা কোটা বিরোধী আন্দোলনের নানা শ্লোগান দেয়ালে লিখে দেন। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে উঠে। সেখানে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।‎সকলে যখন বিজয় উল্লাসে ব্যস্ত ঠিক তখনই রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে তখনও পুলিশ নির্বিচারে মানুষ মারছে। বিজয় উল্লাসে অংশ নিতে এসে লাশের স্তুপে পরিণত হয় অনেকেই। যাত্রাবাড়ি পুলিশ স্টেশনের সামনে সেই সহিংসতায় শুধু ঐদিনই মারা যায় ৫৫ জনের বেশি। শহরের আরেক প্রান্ত আশুলিয়ায় তখন নারকীয়ভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে আরও ৬ জনকে। এদিন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী কয়েকটি থানায় হামলা ভাংচুর এবং আগুন দেয়।‎রাস্তায় কারও হাতে লাল-সবুজের পতাকা। কেউবা মাথায় বেধেছেন লাল কাপড়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে জয়ের উচ্ছ্বাস তাদের চোখে-মুখে। যেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার আনন্দ-আয়োজন টিএসসি, শাহবাগ এলাকাও। এমন বিজয় উল্লাস কে দেখেছে কবে? যেন নতুন এক বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও।‎উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশের কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বিকেল সেনানীবাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেন তিনি।‎বিজয়ের দিনে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে যমুনা টেলিভিশনকে ভাগীদার করতে চেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। যেখানেই যমুনার সহকর্মীরা গেছেন, তাদের মাটি থেকে তুলে অভিনন্দনে ভাসিয়েছেন।‎এদিন, সন্ধ্যার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ছিলেন বিএনপি-জামায়াত সহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও।‎জুলাইয়ের এক তারিখে শুরু হওয়া টানা ৩৬ দিনের কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ হয় স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে। এই প্রজন্ম ৭১ না দেখলেও তারা সৃষ্টি করেছে নতুন এক বাংলাদেশের। যেখানে গণতন্ত্র, অধিকার ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথটা হবে ঋদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *