ফিরে দেখা ৩০ জুলাই: ফেসবুকজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে লাল রঙের প্রতিবাদ

জাতীয় | 30th July, 2025 10:28 am
২০২৪ সালের ৩০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। অথার্ৎ পরদিন থেকে সারাদেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করবে তারা। ৯ দফা দাবিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত চত্বর এবং প্রধান সড়কে এই কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
এদিন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিপ্লবের নতুন মাত্রা দেখে পুরো বিশ্ব। নেটিজেনরা প্রোফাইল পিকচারে লাল রঙ ব্যবহার করে বিক্ষোভ জানান। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব—সবাই যেন লালে লাল হয়ে ওঠেন। রক্তের রঙে ছবি প্রকাশ করে লেখেন—শুধু কোটা নয়, গোটা দেশটার সংস্কার প্রয়োজন।
সেদিন দেশজুড়ে শিক্ষার্থী-জনতা ও শিশু হত্যায় বিষণ্ন ছিল পুরো বাংলাদেশ। সন্তান হারিয়ে অশ্রুসজল চোখে কাঁদছিল শুধু মা নয়, কাঁদছিল গোটা বাংলাদেশ।
বাবা-মায়ের কোলে প্রাণ হারানো আহাদ, বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিতে মৃত্যুবরণ করা নারায়ণগঞ্জের ৬ বছর বয়সী রিয়া গোপ, জুলাই মিছিল দেখতে গিয়ে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া ১৩ বছরের মোবারক। টিয়ার শেলের ধোঁয়া ঠেকাতে জানালা বন্ধ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ১১ বছরের সামি, ১০ বছরের হোসাইন, ১৪ বছরের তাহমিদ-সাদ মাহমুদ, ১৬ বছরের নাঈমা ও ইফাতের মৃত্যু কেবলই সংখ্যা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে।
যদিও এদিন গানে গানে সাম্প্রতিক হত্যা ও সহিংসতার প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। মননে বিষণ্নতা আর কণ্ঠে দ্রোহ নিয়ে পুলিশি বাধায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আড়াই ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এদিকে, স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণ। প্রিজন ভ্যানে প্রিয়জনকে একনজর দেখার জন্য আকুল ছিলেন স্বজনরা। অন্যদিকে, এদিন আওয়ামী লীগের যৌথসভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার নির্দেশ কোথা থেকে এসেছে, কারা অর্থের যোগান দিচ্ছে কিংবা কারা কার সঙ্গে বৈঠক করেছেন—সব তথ্যই সরকারের হাতে আছে।
তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে সরকারের ইস্যু পরিবর্তনের অপকৌশল বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
যদিও আন্দোলনকারীদের ওপর সরাসরি গুলি না চালানো এবং কোটা সংস্কারের সমন্বয়কারীদের মুক্তি চেয়ে করা রিটের শুনানি হয় এদিনও। রাষ্ট্রপক্ষকে আদালত প্রশ্ন করেন—৬ সমন্বয়কারী নিরাপত্তার কথা বলেননি, তাহলে তাদের ডিবিতে আটকে রাখা হয়েছে কেন? শুনানি ঘিরে দুই পক্ষের আইনজীবীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে দফায় দফায় হট্টগোল হয় এজলাসে।
তখন পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় ২৬৪টির বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি হত্যা মামলা। আর গ্রেফতার হয়েছেন ২ হাজার ৮০০-র বেশি—বলেন তখনকার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলেন—মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি এবং তাদের প্রজন্মরাই সহিংসতায় জড়িত।
এদিন ঢাকা মেডিকেলের সামনে মৌন অবস্থানের চেষ্টা করেন অভিভাবকরা। অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের সড়কে অবস্থান করতে দেয়নি। কোটা আন্দোলন ঘিরে হতাহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং যথাযথ পুনর্বাসনসহ ১১ দফা দাবি জানায় ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আহতদের দেখতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া এদিন সারাদেশে শোক পালন করে সরকার। আন্দোলনকারীরা বলছিলেন—গুলি করে মানুষ মেরে শোকের নাটক সাজিয়েছিল হাসিনা।