২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ১৭ জুলাই

0

জাতীয় | 15th July, 2025 1:41 pm


‎একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামি খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি ১৭ জুলাই। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

‎এর আগে গত ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ১৯ মার্চ এ মামলায় সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। পরে, লিভ টু আপিল মঞ্জুর হলেও, হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ।


‎২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হন। আলোচিত ওই ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি মামলা হয়। ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত দু’টি মামলারই রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন ও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।


‎নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, জঙ্গি নেতা মাওলানা তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবু সাইদ, মুফতি মঈনউদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, হাফেজ আবু তাহের, মো. ইউসুফ ভাট ওরফে মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক, মফিজুর রহমান ওরফে মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হোসাইন আহমেদ তামিম, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

‎যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৯ আসামি- শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর, আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।


‎উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতা-কর্মী। তাদের অনেকে আজও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।

ছাত্র-জনতার জাগরণে স্বৈরাচারের পতন: ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট আজ ‎‎জাতীয় | 5th August, 2025 10:53 am‎‎আজ ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট। ঠিক এক বছর আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে পতন হয় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার। সরকার প্রধানসহ, সংসদ সদস্য, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি এমনকি জাতীয় মসজিদের খতিবও পালিয়ে যায় আন্দোলনের ব্যাপকতায়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দলের এমন পরাজয় বিরল। ৩৬ দিনের টানা আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষের জীবনের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও’।‎বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচি পরিণত হয় ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে। সরকারবিহীন এক জাতির দায়িত্ব নেন সেনাপ্রধান। জানান, বিচার হবে সকল হত্যাকাণ্ডের।‎‎কেমন ছিলো সেদিনের ৫ আগস্ট! সকাল থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো রাজধানী ঢাকায়। দুপুর ১১ টার পর বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। দুপুর গড়াতে এই ঢ্ল পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শুধু বাংলার ছাত্র আর রাজনীতিবীদেই সীমিত নয়, সমুদ্রের প্রতিটি বিন্দুর মত লং মার্চ টু ঢাকা বাস্তবায়নে যোগ দেন মায়েরা-যারা এতদিন সন্তানের নিরাপত্তার জন্য পথ আগলে রেখেছিলেন, বাবারা-যারা শাসন করে সন্তানকে ঘরে ফিরতে বলেছিলেন, শহীদদের পরিবার, আত্মীয়, পরিচিত এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ। ছিলেন নিরীহ ছাপোষা চাকুরীজীবিরা-যারা চাকুরী হারানোর ভয়ে মুখে তালা দিয়েছিলেন যোগ দিয়েছিলেন তারাও। শুধু ছাত্রই নয়, তাদের সাথে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।‎‎এমন পরিস্থিতিতে গণভবন ছেড়ে পালিয়ে যায় প্রবল পরাক্রমশালী তৎকালীন সরকারপ্রধান, যিনি উদ্ধত কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন ‘শেখ হাসিনা পালায় না’। বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে বিমান বাহিনীর এমআই‑১৭ হেলিকপ্টারে প্রথমে গণভবন থেকে তখনকার বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে। পরে সেখান থেকে সি১৩০ জুলিয়েট হারকিউলিসে করে স্বজনসহ পালিয়ে যান ভারতের গাজিয়াবাদের হিন্দোন বিমান ঘাটিতে।‎এরই মধ্যে গণমাধ্যমে খবর আসে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে শেখ হাসিনা। পতন হয়েছে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী সরকার ব্যবস্থার। কিন্তু পরিস্কার কোনো ঘোষণা নেই। ২টায় সেনাপ্রধানের ভাষণ। সবার চোখ ছিল মোবাইল বা টিভিতে। তখনকার বাস্তবতায় বিশেষ করে বললে যমুনা টেলিভিশনে। ১ ঘণ্টা বিলম্বে বেলা ৩ টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেষা ভাষনে সেনাপ্রধান নিশ্চিত করেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা।‎‎তখনই বিজয় উল্লাসে নামে পুরো জাতি। ছাত্র-জনতার জনসমুদ্র ততক্ষণে গণভবনে পৌঁছে যায় বিজয় মিছিল নিয়ে। গণভবনের প্রতিটি কোনায় তখন বাংলার মানুষের উপস্থিতি। পাশের লেকে নেমে গোসল করে হাজার হাজার মানুষ। সকলের মধ্যে তখন বিরাজ করছিল অদম্য-বুনো উল্লাস। আবেগ–আপ্লুত হয়ে কেউ কেউ কান্নাও করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কেউ আবার আদায় করেন নামাজ। শুধু গণভবন নয়, সংসদ ভবনেও বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে ছাত্র-জনতা। গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার আনন্দেই যেন এমন উল্লাস-আনন্দ-আর হাসিমুখ।‎প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরও নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ মানুষ। বৈঠক রুম, দরবার হলসহ প্রতিটি কক্ষে মানুষ প্রবেশ করে। এসময় তারা কোটা বিরোধী আন্দোলনের নানা শ্লোগান দেয়ালে লিখে দেন। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে উঠে। সেখানে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়।‎সকলে যখন বিজয় উল্লাসে ব্যস্ত ঠিক তখনই রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে তখনও পুলিশ নির্বিচারে মানুষ মারছে। বিজয় উল্লাসে অংশ নিতে এসে লাশের স্তুপে পরিণত হয় অনেকেই। যাত্রাবাড়ি পুলিশ স্টেশনের সামনে সেই সহিংসতায় শুধু ঐদিনই মারা যায় ৫৫ জনের বেশি। শহরের আরেক প্রান্ত আশুলিয়ায় তখন নারকীয়ভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে আরও ৬ জনকে। এদিন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী কয়েকটি থানায় হামলা ভাংচুর এবং আগুন দেয়।‎রাস্তায় কারও হাতে লাল-সবুজের পতাকা। কেউবা মাথায় বেধেছেন লাল কাপড়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে জয়ের উচ্ছ্বাস তাদের চোখে-মুখে। যেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার আনন্দ-আয়োজন টিএসসি, শাহবাগ এলাকাও। এমন বিজয় উল্লাস কে দেখেছে কবে? যেন নতুন এক বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টু পয়েন্ট ও।‎উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশের কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বিকেল সেনানীবাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেন তিনি।‎বিজয়ের দিনে উচ্ছ্বাস-উল্লাসে যমুনা টেলিভিশনকে ভাগীদার করতে চেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। যেখানেই যমুনার সহকর্মীরা গেছেন, তাদের মাটি থেকে তুলে অভিনন্দনে ভাসিয়েছেন।‎এদিন, সন্ধ্যার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ছিলেন বিএনপি-জামায়াত সহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও।‎জুলাইয়ের এক তারিখে শুরু হওয়া টানা ৩৬ দিনের কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ হয় স্বৈরাচারি শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে। এই প্রজন্ম ৭১ না দেখলেও তারা সৃষ্টি করেছে নতুন এক বাংলাদেশের। যেখানে গণতন্ত্র, অধিকার ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের পথটা হবে ঋদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *