২০২৫ সালে মার্কিন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হচ্ছে কেন?


অর্থনীতি | 2nd July, 2025 10:33 am
১৯৭৩ সালের পর, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির কারণে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা ডলার বিক্রি করতে শুরু করেছেন, যা ডলারের ‘সেফ হ্যাভেন’ (নিরাপদ মুদ্রা) অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ডলার সূচকে রেকর্ড পতন
ডলার ইনডেক্স, যা পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েনসহ ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান পরিমাপ করে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ১০.৮% নিচে নেমেছে। ট্রাম্পের অস্থির ‘শুল্ক নীতি’ এবং ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে তার সমালোচনা ডলারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়েছে।
এছাড়া, কংগ্রেসে আলোচিত ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল’ ট্যাক্স বিল নিয়ে অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ রয়েছে। এই বিলটি আগামী দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের বোঝা ট্রিলিয়ন ডলার বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার ফলে ট্রেজারি বন্ড মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীরা সরে যাচ্ছেন।
ডলারের পতনের কারণ
১. ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ: গত ২ এপ্রিল, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পণ্য রফতানিতে শুল্ক আরোপ করে, যা মার্কিন অর্থনীতির প্রতি আস্থা কমায়। এরপর ‘এসঅ্যান্ডপি ৫০০’ সূচক তিন দিনে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্য হারায়
২. ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে সংশয়: ট্রাম্পের ফেডের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
৩. বৃহৎ কর বিল: ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর কাটছাঁট ও ঋণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ-টু-জিডিপি অনুপাত বাড়িয়ে দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
৪. সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা: মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছরে ২-৩ বার সুদের হার কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ডলারের মান আরও দুর্বল করতে পারে।
স্বর্ণের দাম বেড়েছে, ডলারের মান কমেছে
ডলার দুর্বল হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের ‘ইউএস-ডলার’ রক্ষায় স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, যার ফলে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ডলারের পতনের প্রভাব
মার্কিন রপ্তানি সস্তা হবে, কিন্তু শুল্ক নীতির কারণে এর সুবিধা অনিশ্চিত।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুখবর: ডলার দুর্বল হলে জাম্বিয়া, ঘানা বা পাকিস্তানের মতো ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর ডলার-ঋণ পরিশোধের বোঝা কমবে।
কমোডিটির দাম বাড়বে: তেল, ধাতু ও কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো (ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, চিলি) লাভবান হবে।
অন্যান্য মুদ্রার অবস্থা
ইউরো ১৩% শক্তিশালী হয়েছে (১ ইউরো = ১.১৭ ডলার)।
জার্মানি ও ফ্রান্সের বন্ড-এ বিনিয়োগ বেড়েছে।
ইউরোপীয় শেয়ার মার্কেট ২০২৫ সালে ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ডলারে হিসেব করলে ২৩% লাভ।
যদিও ডলার এখনও বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ কারেন্সি, তবে ট্রাম্পের নীতির কারণে এর আস্থা কমছে। ব্যাংক জে সাফ্রা স্যারাসিনের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্স্টেন জুনিয়াস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন বিনিয়োগের জন্য কম আকর্ষণীয়। সেই সাথে, মার্কিন সম্পদ আগের মতো নিরাপদ নয়।”
যদি বিনিয়োগকারীরা ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে, তবে ডলারের দাম আরও পড়তে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত ডলারের পতন অব্যাহত থাকতে পারে।
সূত্র: আলেক্স কোজুল-রাইট (অর্থনৈতিক বিশ্লেষক), আল জাজিরা।