ইসরায়েলের গাজা সিটি দখল পরিকল্পনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

0


‎আন্তর্জাতিক | 9th August, 2025 11:39 pm


‎ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। শুক্রবার এ ঘোষণা আসার একদিন আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো গাজা উপত্যকার সামরিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানান। ‘আলজাজিরা‘র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদক্ষেপে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।


‎জাতিসংঘের উদ্বেগ:


‎জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি একে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ আখ্যা দিয়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক পরিকল্পনা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পরিপন্থী এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের পরিপন্থী।


‎ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া:


‎ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় পরিকল্পনাকে ‘সম্পূর্ণ অপরাধ’ বলে নিন্দা করেছে। তারা একে গণহত্যা, অনাহার ও অবরোধের ধারাবাহিকতা বলে মন্তব্য করেছে। হামাস সতর্ক করে বলেছে, এ সিদ্ধান্ত গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে। ইসলামিক জিহাদ একে ‘গণবিনাশ যুদ্ধের নতুন অধ্যায়’ বলে উল্লেখ করেছে।


‎ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান:


‎ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ইইউ-ইসরায়েল সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনও পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।


‎যৌথ নিন্দা:


‎অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিবৃতিতে পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার একে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়ে রক্তপাত বাড়াবে বলে সতর্ক করেছেন।


‎জার্মানি, ফ্রান্স ও চীনের প্রতিক্রিয়া:


‎জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম ইসরায়েলে রপ্তানি করা হবে না। ফ্রান্স পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। চীন গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।


‎তুরস্ক, মিসর ও সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া:


‎তুরস্ক বলেছে, এটি ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার চেষ্টা। মিসর একে ‘গণবিনাশের যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরব এটিকে জাতিগত নির্মূলের অংশ বলে নিন্দা জানিয়েছে।


‎ইরান, কাতার ও জর্ডানের অবস্থান:


‎ইরান পরিকল্পনাকে গণহত্যার সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কাতার একে বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত বলে সতর্ক করেছে। জর্ডান বলেছে, এটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে ধ্বংস করবে।


‎সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়া:


‎ইউএই পরিকল্পনার ফলে ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ হবে বলে সতর্ক করেছে। ইন্দোনেশিয়া একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, পরিকল্পনা ভুল এবং বন্দিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াবে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং বলেছেন, এটি স্থায়ী উচ্ছেদের শামিল।


‎পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া:


‎পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ পরিকল্পনাকে বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি হিসেবে বর্ণনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।


‎ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রতিক্রিয়া:


‎ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, আন্তর্জাতিক নিন্দা তাদের দৃঢ়তা নষ্ট করতে পারবে না। তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ একে ‘বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়ে সামরিক পরামর্শ উপেক্ষার অভিযোগ তুলেছেন।


‎মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া:


‎অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড একে ‘চূড়ান্ত ঘৃণ্য ও ভয়ঙ্কর’ পরিকল্পনা বলেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ মানে আরও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *