ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের ‘গণহত্যা’ মামলায় যোগ দিচ্ছে ব্রাজিল

0


‎আন্তর্জাতিক | 24th July, 2025 8:28 am


‎সাউথ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ঘোষণা করেছে যে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘গণহত্যা’ চলার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে। পশ্চিমা নয়—এমন দেশগুলোর চাপ বৃদ্ধির দাবি জোরালো হওয়ার মধ্যেই ব্রাজিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‎ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্থানীয় সময় বুধবার (২৩ জুলাই) জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়া তারা ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ নিয়ে গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চলমান নৃশংসতার মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। ব্রাজিলের বিশ্বাস, নৈতিক দ্বিধা বা রাজনৈতিক গাফিলতির আর কোনো স্থান নেই। দায়মুক্তি আন্তর্জাতিক আইনকে দুর্বল করে এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।’


‎ব্রাজিলের এই সিদ্ধান্তের খবর প্রথম প্রকাশ করে ব্রাজিলিয়ান সংবাদপত্র ফোলহা ডি সাও পাওলো। ইসরায়েলের গাজায় সহায়তা প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ এবং গণদুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার মতো কর্মকাণ্ড ক্রমবর্ধিত সমালোচনার মুখে রয়েছে।

‎ব্রাজিল সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশনের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় ব্রাজিল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে।’

‎বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সহিংসতার ঘটনায় ব্রাজিল গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে, যা কেবল গাজা নয়, পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়েছে।’


‎যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে খাদ্যাভাব: ব্রাজিলের তীব্র নিন্দা


‎লাতিন আমেরিকার দেশটি বলেছে, গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেসামরিক জনগণ ‘ক্রমাগত সহিংসতা’ ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ‘যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে খাদ্যাভাবের ন্যক্কারজনক ব্যবহার’।

‎স্পেন, তুরস্ক ও আয়ারল্যান্ডের মতো কয়েকটি দেশও ইতিমধ্যে এই মামলায় হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়ে আইসিজে-কে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের রায় দিতে আহ্বান জানিয়েছে।


‎ইসরায়েলের সমালোচনায় ব্রাজিলের কণ্ঠস্বর সম্প্রতি তীব্র হয়েছে। গত ব্রিকস সম্মেলনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ইসরায়েলের গাজা অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে নিন্দা জানিয়েছিলেন।


‎পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই মামলায় হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ‘ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা থেকে সুরক্ষার অধিকার অপরিবর্তনীয়ভাবে লঙ্ঘিত হওয়ার যৌক্তিক সম্ভাবনা’-এর ভিত্তিতে।


‎ইসরায়েল ও ব্রাজিলিয়ান ইহুদি সংগঠনের প্রতিক্রিয়া


‎ব্রাজিলিয়ায় ইসরায়েলের দূতাবাস বলেছে, ব্রাজিলের বিবৃতিতে ‘অতিরঞ্জিত ও বাস্তবতাবিবর্জিত ভাষা’ ব্যবহার করা হয়েছে এবং এতে হামাসের ভূমিকা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। ব্রাজিলের জাতীয় ইহুদি সংগঠন কনিব এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে বলেছে, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে ব্রাজিলের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্ব ভেঙে দেয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত, যা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির চরমপন্থাকে প্রমাণ করে।’


‎আইসিজে-এর সাম্প্রতিক রায় ও পরিস্থিতি


‎আইসিজি এখনও গাজায় গণহত্যা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেননি। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আদালত ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোসহ গণহত্যা রোধে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এই চাপ বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে—যদিও বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গাজায় ইসরায়েলের ‘ অধিকার লঙ্ঘন’ সম্পর্কে সতর্ক করছে।

‎গত মার্চ মাসে, ইসরায়েল গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ রেখেছিল। পরে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত একটি গোষ্ঠী ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর মাধ্যমে সীমিত সহায়তা পুনরায় শুরু করে।


‎মে মাস থেকে জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত ১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে। এদিকে, গাজায় অনাহারে মৃত্যুর খবরও বাড়ছে।

‎জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জিএইচএফ-এর কেন্দ্রগুলিকে ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন এবং এই গোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকার করেছেন, যা ইসরায়েলের নির্দেশে পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে প্রতিস্থাপন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *