যুদ্ধকালীন সাইবার হামলায় ইরানের দুটি প্রধান ব্যাংকের ডেটা ধ্বংস

আন্তর্জাতিক | 20th July, 2025 12:14 pm
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে চলা ১২-দিনের যুদ্ধের সময় একটি সাইবার হামলায় ইরানের শীর্ষ ব্যাংক সেপাহ ও পাসারগাদের ব্যাংকিং ডেটা ধ্বংস হয়ে যায়। এই সাইবার হামলার কারণে দেশজুড়ে সেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং একটি ইরানি ব্যাংকিং সফটওয়্যার কোম্পানিকে জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। দেশটির একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের বরাত দিয়ে ইরান ইন্টারন্যাশনাল এ তথ্য জানায়।
‘কিছুই অ্যাক্সেস করা যাচ্ছিল না। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না,’ ডটিন সফটওয়্যার কোম্পানির ডেপুটি হেড অব প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট হামিদরেজা আমুজেগার লিঙ্কডইনে একটি পোস্টে ১৭ জুনের এই হামলার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন।
তিনি এও বলেন, ‘ব্যাকআপ সাইটে চেষ্টা করলাম—সেখানেও একই অবস্থা।’
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর প্রায় মাসখানেক এই দুই ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং এবং এটিএম পরিষেবা অকার্যকর ছিল। ইরানি ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল সিস্টেমের প্রধান সরবরাহকারী ডটিনই এই সংকটের কেন্দ্রে পড়ে।
‘সেপাহ ব্যাংকের প্রাইমারি ডেটা সেন্টার ব্ল্যাংক হয়ে গিয়েছিল, মনিটরিং ড্যাশবোর্ড জমে গিয়েছিল এবং সংরক্ষিত সব ডেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল,’ তিনি যোগ করেন।
ইঞ্জিনিয়াররা যখন ডিজাস্টার রিকভারি সাইটে সুইচ করার চেষ্টা করেন, তখন দেখেন যে সেটিও ব্যর্থ হয়েছে এবং একই ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
‘সেই মুহূর্তে অপরাধী চিহ্নিত করা বা টেকনিকাল বিবরণ বের করা আর অগ্রাধিকার ছিল না,’ আমুজেগার লিখেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রাধান্য ছিল পাবলিক ব্যাংকিং সেবা দ্রুত ফিরিয়ে আনা।’
এজন্য দলগুলো ডটিনের তৈরি একটি পোর্টেবল ডেটা সেন্টার স্যামসোনাইটের সাহায্য নেয়, যা ২০২২ সালের সেবা বিঘ্নের পর তৈরি করা হয়েছিল। এই সিস্টেমটি স্বল্প সময়ের জন্য মূল ব্যাংকিং কার্যক্রম—বিশেষ করে কার্ড লেনদেন—চালু রাখতে সক্ষম, প্রধান নেটওয়ার্ক ছাড়াই।
ইরানের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ নোবিটেক্সও যুদ্ধের সময় তাদের সিস্টেমে সাইবার হামলার কথা নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলপন্থী হ্যাকার গ্রুপ প্রেডেটরি স্প্যারো, যারা ইতিপূর্বে ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছিল, এবার সেপাহ ব্যাংককে ‘অচল’ করে দেয়া এবং নোবিটেক্স থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ তোলার দায় স্বীকার করেছে।
এখনও সেপাহ ব্যাংক সামরিক কর্মীদের বেতন প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে রয়েছে।
পাসারগাদ ব্যাংক ইতিমধ্যেই স্যামসোনাইট মোতায়েন করেছিল, ফলে ১৯ জুনের প্রথম দিকে তারা সীমিত সেবা ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। কিন্তু সেপাহ ব্যাংক, যারা তখনও সিস্টেমটি ইনস্টল করেনি, তারা দীর্ঘ সময় অফলাইনে ছিল।
আংশিক অফলাইন ব্যাকআপ থেকে পুরো সিস্টেম পুনরায় তৈরি করার পর ২০ জুনের মধ্যে সেখানে মৌলিক কার্ড সেবা ফিরে আসে।
‘যে ব্যাংক মাসে এক বিলিয়নের বেশি লেনদেন প্রক্রিয়া করে, তাদের জন্য এক দিনের ডেটা হারানোর অর্থ ৩০ মিলিয়নের বেশি লেনদেন হারানো,’ আমুজেগার বলেন।
সেপাহ ব্যাংক পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে ২৭ জুন পর্যন্ত সময় নেয়, এই সময়ে স্যামসোনাইট ৬০ মিলিয়নের বেশি লেনদেন প্রক্রিয়া করে।
তিনি যোগ করেন, ‘সাইবার যুদ্ধ যুদ্ধবিরতির তিন দিন পর শেষ হয়। কিন্তু পুনরুদ্ধারে মাসের পর মাস লাগবে। আমি এখানে যা বললাম, তা পুরো ঘটনার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র।’